ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের ঘোষণার পর জ্বালানী তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপকভাবে বাড়ছে দাম।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৭ দশমিক ৭৬ ডলারে, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্রদের সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনকে (ন্যাটো) কেন্দ্র করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে রাশিয়া ও তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেনের মধ্যে। গত দুই মাস ধরে ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ২ লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছে রাশিয়া।
এদিকে সীমান্তে রুশ সেনা উপস্থিতির পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রসমূহ অভিযোগ করে আসছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পরিকল্পনা থেকেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে মস্কো। যদিও রুশ সরকার বরাবরই বলে এসেছে, ইউক্রেনে কোনো প্রকার সামরিক আগ্রাসন চালানোর পরিকল্পনা মস্কোর নেই।
এর আগে সোমবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে নতুন মোড় নিয়েছে এই উত্তেজনা। রুশ স্বীকৃতি পাওয়া এই দুই দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং একইসঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদেরও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখী হতে হবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে দেশটি।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার ওপরও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিষয়টিও বিবেচনাধীনে আছে মার্কিন সরকারের।
কিন্তু রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে জ্বালানী তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে তার প্রতিক্রিয়া গুরুতর হবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ম্যানুলাইফ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের কর্মকর্তা সুয়ে ত্রিন।
বিবিসিকে সুয়ে ত্রিন বলেন, “যদি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, সেক্ষেত্রে জ্বালানী তেল ও গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাজারে।”
অপর বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ফিডেলিটি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক মাইক কুরির শঙ্কা, অপরিশোধিত তেলের মূল্য আরও বাড়তে পারে এবং এক পর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেল ১০০ ডলার বা তার বেশি দামে বিক্রি হবে।
মাইক কুরি বলেন, “বিশ্বে প্রতিদিন যত তেল ব্যবহৃত হয়, তার ১০ ভাগের এক ভাগ সরবরাহ করে রাশিয়া। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নির্ধারণে রাশিয়ার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং যদি সেখান থেকে তেলের যোগান না আসে, সেক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষকে ভুগতে হবে।”
মাইক আরও বলেন, “সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল রপ্তানি করে রাশিয়া। সেইসঙ্গে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়াতেই উত্তোলন করা হয়। আর ওই গাসের ওপর ইউরোপ অনেকটা নির্ভরশীল।”
এদিকে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে বহু বছর ধরে। এসব বিধিনিষেধ রাশিয়ার অর্থনীতিকে বড় ধরনের চাপে রেখেছে। তবে এবার কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে তা স্পষ্ট নয়।